ঢাকাশনিবার , ২৩ মার্চ ২০২৪
  1. Uncategorized
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইতিহাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. প্রবাসের খবর
  12. বিনোদন
  13. মিডিয়া
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল

নোয়াখালীর দৃষ্টিনন্দন মোগল স্থাপত্য বজরা শাহী মসজিদ

জহিরুল হক জহির
মার্চ ২৩, ২০২৪ ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

মোগল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় অবস্থিত বজরা শাহী মসজিদ। প্রায় ৩০০ বছরের আগে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি বজরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বজরা গামে অবস্থিত। মসজিদটি সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সজ্জিত। নোয়াখালীসহ সমগ্র বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে রয়েছে এর ঐতিহাসিক অবদান।

 

মোগল সম্রাটগণ অবিভক্ত ভারতবর্ষে ৩০০ বছরের অধিক সময় রাজত্ব করেন। দীর্ঘ এ সময়কালে মোগল সম্রাটগণ এবং তাদের উচ্চপদস্থ আমলারা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ইমারত ও মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজও স্থাপত্য শিল্পের বিরল ও উজ্জ্বল নির্দশন হিসেবে বিরাজমান।

 

২৯ নভেম্বর ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে।

 

মসজিদটি বর্তমানে ভালোভাবেই সংরক্ষিত আছে, এবং এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সুরক্ষিত স্থানগুলোর তালিকাতেও রয়েছে।

 

আমাদের দেশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এ মসজিদে এলেই মসজিদের সৌর্দয্য দেখলে দর্শনার্থীদের মন জুড়িয়ে যায়।

 

জানা গেছে, ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে (১১৫৪ হিজরি ও বাংলা ১১৩৯ সন) মোগল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে বজরার জায়গিরদার পারস্য দেশীয় পীর মিয়া আম্বর শাহের নির্দেশে আমানুল্লাহ ও ছানা উল্যা ৩০ একর জমিতে দিঘি খনন করে তার পাশেই নান্দনিক এ স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণ করতে প্রায় ২৬ বছর লেগেছে।

 

বজরা শাহী মসজিদের আয়তন ১১৭ দশমিক ১২ বর্গমিটার (১৬ মিটার × ৭.৩২ মিটার)। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা আকৃতির। বাইরের চার কোনায় অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। পূর্বদিকে তিনটি,উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে। দরজার বাইরের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং দরজার উভয় পাশে রয়েছে সরু মিনার।

 

পূর্বদিকের তিনটি দরজা বরাবর কিবলা দেওয়াল রয়েছে। যার অভ্যন্তরে রয়েছে তিনটি মেহরাব। যা অত্যন্ত কারুকার্যময়। মাঝের মেহরাবটি অন্য দুটির তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড়। বজরা শাহী মসজিদের পূর্বদিকের মধ্যের দরজায় একটি ফারসি ফলকে এর নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম লেখা রয়েছে। স্থাপনাটির চার কোণে চারটি সুন্দর মিনার রয়েছে,যাহা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণে মোগল স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। মসজিদের পূর্বদিকে আছে বিরাট তোরণ। তোরণের দোতলার ওপরে রয়েছে মনোরম উঁচু মিনার। এর সৌন্দর্য ও অলংকরণের জন্য চীন দেশীয় গ্লাস কেটে মসজিদের গায়ে লাগানো হয়েছে। যা এখনো নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী হিসেবে প্রশংসনীয়। মসজিদের অভ্যন্তরে দুটি কক্ষ আছে যা কারুকার্য বিশিষ্ট আড়াআড়ি খিলান দ্বারা তিন ভাগে বিভক্ত। ছাদের ওপর সু-সজ্জিত তিনটি গম্বুজ আছে।

 

১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটির ব্যাপকভাবে মেরামত করেন। এসময় সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সুসজ্জিত করা হয় মসজিদটি। বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা ধরনের নকশা দ্বারা মসজিদের বাহির ও ভেতরের দেওয়ালগুলি চমৎকারভাবে অলঙ্কৃত করা হয়। প্রধান মেহরাবটিতে রয়েছে জাঁকালো স্টাকো অলঙ্করণ। এর প্রতিটি অংশ বিভিন্ন রংয়ের চীনা মাটির পাত্রের টুকরা দ্বারা অতিসূক্ষ্মভাবে অলঙ্কৃত করা হয়েছে।

 

পরে ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য কাজ শুরু করে। বর্তমানে এটি ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সুরক্ষিত স্থাপনাগুলোর তালিকায় রয়েছে। দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থানের একটি এই বজরা শাহী মসজিদ দেখতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।

 

মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান ছিদ্দিক বলেন,১৯০৯ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সিরামিক দিয়ে মসজিদটির সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ করা হয়। জমিদাররা বংশানুক্রমে এ মসজিদের মোতাওয়াল্লি ছিলেন। জমিদার প্রথা উঠে যাওয়ার পর এখন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মসজিদটি পরিচালনা করে আসছেন।

 

ঢাকা থেকে নোয়াখালী জেলা শহরে যাওয়ার পথে মহাসড়কের সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা বাজারে গাড়ি থেকে নেমে মূল সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে অথবা রিকশায় করে কয়েক মিনিট এগোলেই মসজিদটি দেখতে পাবেন।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ মসজিদে বাস, মোটরসাইকেল অথবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায়  করেও যাওয়া যায় ।