নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চরআলগী খালে আড়াআড়ি ভাবে দেওয়া (অবৈধ বাঁধ) বাঁধ যেন কেউ কাটতে না পারে সে জন্য লাঠি হাতে শতাধিক লোক পাহারা দিচ্ছে। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রিকশাওয়ালার দোকান এলাকায় গিয়ে এ পরিস্থিতি দেখা যায়। এ বাঁধ নিয়ে যেকোনো মুহূর্তে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে বুধবারের হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্র-জনতা বাঁধ কেটে দেওয়ার দাবিতে জেলার সদর উপজেলার সোনাপুর বাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন করেছেন। এসময় বক্তারা ওই বাঁধ কেটে দিয়ে জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, চরআলগী খালের বাঁধ না কাটলে নোয়াখালী জেলার পানিবন্দি মানুষের কষ্ট দুর হবে না। এছাড়া বুধবার ধানশালিক বাজারে ছাত্র-জনতার উপর যারা অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে জলাবদ্ধতা নিরসন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে নোয়াখালী খালসহ জেলার ২৩টি খালের পুনঃখননে ৩২৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেয় একনেক। তবে স্থানীয়দের দাবি, সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ও তার দোসর ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল খান গং, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই কাদের মির্জা, শাহাদাত হোসেন, ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত নোয়াখালী খালের মুখে নিজেদের অবৈধ মাছের খামার (প্রজেক্ট) বাঁচাতে অপরিকল্পিতভাবে চরআলগী খাল খনন করে। এতে অনেকগুলো সেতু ধসে এলাকার মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙনের শিকার হয় স্থানীয়রা।
ধানশালিক ইউনিয়নের স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, চরআলগী খাল খননের পর ব্যাপক ভাঙন তৈরি হলে প্রশাসন রিকশাওয়ালার দোকানে খালের মাঝে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ভাঙন রক্ষা করে। এখন জেলার বাসিন্দারা বন্যার পানি নিষ্কাশনে সেই বাঁধ কাটতে চাইলে এলাকাবাসী বাধার সৃষ্টি করে। সবাই লাঠি হাতে দিনরাত বাঁধ পাহারা দিচ্ছে। তারা পানি নিষ্কাশনের জন্য নিজেদের চলাচলের রাস্তাও কয়েকস্থানে কেটে দিয়েছে।
স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, জান দেব তবুও বাঁধ কাটতে দেব না। আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য চলাচলের পাকা রাস্তা পাঁচ স্থানে কেটে দিয়েছি, প্রয়োজনের আরও কাটবো। তবুও খালের বাঁধ কাটতে দেবো না।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে এ বাঁধ কাটতে কামাল গংয়ের লোকজন আসলে স্থানীয়দের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। আবার কেউ আসলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
তবে কবিরহাট ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল খান বলেন, নোয়াখালী খালে আমার এক ফুট জায়গাও নেই। আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করা হচ্ছে। এদিকে নোয়াখালী খালের অভিযুক্ত দখলদারদের অনেকে এখন পলাতক। তাদের মোবাইলে ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করেননি।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বুধবার চরআলগী খালে বাঁধ কাটার জন্য কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন গেলেও গ্রামবাসী তাদেরকে বাঁধের কাছে যেতে দেয়নি। বিষয়টি আলাপ আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।