নোয়াখালীর সুবর্ণচরে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব, সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী (লক্ষীপুর-৪ আসনের) সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মন্নানের বিপণীকেন্দ্র ও আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। স্থানীয় ছাত্রদল-যুবদল ও শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ ওঠেছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার হারিছ চৌধুরী বাজার এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা অনুষ্ঠানের মূল ফটকের তোরণ, ভেতরের চেয়ার ও স্টেজ ভাঙচুর করে।
হামলার সময় ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪’ এর ক্যামেরাম্যান আবদুর রাজ্জাক সহ অনন্ত ৫জন আহত হয়েছেন।
হামলাকারীরা ক্যামেরাপারসন থেকে ভিডিও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং অন্যান্য সংবাদকর্মীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে। ঘটনার সময় অনুষ্ঠানস্থলের পাশে চরজব্বর থানার একদল পুলিশ থাকলেও তারা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সুবর্ণচর উপজেলার হারিছ চৌধুরী বাজারের পূর্ব পাশে সোনাপুর-চেয়ারম্যানঘাট সড়কের পাশে ‘সুবর্ণ সিটি’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন- এই প্রকল্পের মালিক বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান।
বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টার যোগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। সেখানে তাঁকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে প্রতিহত করার ঘোষণার সংবাদ পেয়ে স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান কে অনুষ্ঠানে রেখে কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার মান্নান নগরে চলে যান।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুপুর আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগমুহূর্তে উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক আতিকুর রহমান ওরফে অশ্রু ও শ্রমিক দলের যুগ্মআহ্বায়ক মো.সোহরাওয়ার্দী সহ ১৫-২০ জন দলীয় নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা শুরুতে অনুষ্ঠানের প্রবেশ পথে নির্মাণ করা তোরণের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং ভেতরে অনুষ্ঠানস্থলের চেয়ার ও স্টেজ ভাঙচুর করে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। হামলাকারীরা এ সময় অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেখানে উপস্থিত আবদুল মান্নানের স্ত্রী ও আয়োজকেরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
চ্যানেল ২৪ এর চিত্রগ্রাহক আবদুর রাজ্জাক বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে একদল তরুণ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা-ভাঙচুর করতে দেখে তিনি ক্যামেরা নিয়ে এগিয়ে যেতেই তাঁরা তাঁর দিকে তেড়ে আসেন। তাঁর হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি বাঁম হাতে আঘাত পান। তাঁর হাতে থাকা ভিডিও ক্যামেরাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলাকারীরা এ সময় হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে অন্য সহকর্মীরা ক্যামেরা রক্ষা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মান্নান ফাউন্ডেশনের এজিএম হারুনর রশীদ বলেন, ঘটনার সময় চর জব্বর থানার একদল পুলিশ অনুষ্ঠানস্থলের সামনে থাকলেও তারা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসেনি। পুলিশের সামনেই এই হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়া হয়।
হামলার বিষয়ে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আওয়ামীলীগের দোসরদের পুনর্বাসন করা হচ্ছিল। বিষয়টি যখন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানতে পেরেছেন, তখনই তাঁরা বাধাগ্রস্ত করেছেন।
এ বিষয়ে চর জব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন মিয়া বলেন, হামলা হয়নি, ওখানে বিএনপির একটি পক্ষ মিছিল করেছে, এ কারণে আর অনুষ্ঠান হয়নি। সেখানে থাকা পুলিশ বিষয়টি দেখছে। পুলিশের সামনেই হামলা হয়েছে বলার পর ওসি বলেন, এ রকম তো হওয়ার কথা নয়।