নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বার ইউনিয়নে ছেলের (২০) বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অপবাদ এনে গ্রাম্য সালিশে ছেলের মা’কে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করেছে ইউপি সদস্য (মেম্বার)। তবে এ ঘটনায় ছেলেকে নয়, লাঠিপেটা করা হয় ছেলের মা’কে। ইউপি সদস্য সবার সামনে মা’কে (৪০) লাঠিপেটা করেন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের। তবে এই ভিডিও ৮-১০ মাস আগের বলে নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী ।
লাঠিপেটা করা জনপ্রতিনিধির নাম আইয়ুব আলী ওরফে তিন আঙ্গুলের মেম্বার। সে সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান জনপ্রতিনিধি (মেম্বার) তিনি একই ওয়ার্ডের শামসুল হকের ছেলে। ভুক্তভোগী বিবি কুলসুম (৪০) সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের চরপানা উল্যা গ্রামের মো. মোহতাসিমের প্রথম স্ত্রী।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, আশে-পাশে নারী-পুরুষ সহ ছোট-বড় কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়ে আছে। মাঝখানে বিবি কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছেলের অপরাধে মায়ের সম্পৃক্ততার কথা বলা হলে, বিবি কুলসুম অস্বীকার করলে একপর্যায়ে উপর্যুপরি লাঠিপেটা করতে থাকেন ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী।
এ সময় পাশের কেউ কেউ ছেলের অপরাধের জন্য মা বিবি কুলসুমকে না মারার অনুরোধ করলেও কথা শুনেননি ইউপি সদস্য। আবার একই ভিডিওতে তার দেবর মোহাম্মদ মহসিন মাঝিকে (৪২) গালমন্দ করে তাকে মারার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যায়। প্রায় ৮-১০ মাস আগে ওই সালিশে নারীকে লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতে ছেলে সাকিবের চুরির জন্য বিবি কুলসুম কে দায়ী করা হয়। তারপর সবার সামনে বিবি কুলসুমকে লাঠিপেটা করেন ইউপি সদস্য।
ভুক্তভোগী বিবি কুলসুম বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করা হয়। তারপর আমাকে দোষী করা হয়। মেম্বার আইয়ুব আলী সবার সামনে আমাকে লাঠিপেটা করেছে। আমি তখন অপরাধীর মা তাই কারো কাছে ন্যায় বিচার পাইনি। ঘটনাটি আমি কাউকে জানাতে পারিনি কারণ আইয়ুব আলী মেম্বার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ইউপি সদস্য।
ভুক্তভোগীর স্বামী মোহতাসিম বলেন, আমার ঘর-বাড়ি লুট করা হয়েছে। আমাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটা অনেক আগের। তবে আমরা মুখ খুলে কিছু বলতে পারতাম না। আমাদেরকে অনেক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি সবার শাস্তির দাবি করছি।
এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ভিডিও পুরাতন বলে জানান ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, চুরির অপবাদ ছিল সত্য, তবে আমি তাদের আত্মীয় হই। সেজন্য শাসন করেছি। আর ভিডিওটি এক বছর আগের। আমি দুইবারের ইউপি সদস্য। আওয়ামী লীগের সমর্থক। পুরাতন ভিডিও দিয়ে বর্তমান সময়ে বিএনপির লোকেরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এ বিষয়ে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন,শুনলাম মাত্র, আমি ভিডিওটা দেখিনি। এছাড়াও কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগীরা যদি অভিযোগ করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।